করোনা ভাইরাসের (COVID-19) বৈজ্ঞানিক প্রকৃতি তার প্রতিরোধ

Sharing Helps!

 [ করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ হাজারের মত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় ১০০টি জার্নালে প্রতিদিন গড়ে ২০টি গবেষণা প্রবন্ধ পাঠানো হচ্ছে। ফলে, বিশ্বব্যাপী এই গবেষণার গুরুত্ব কত তা অনুমেয়। চীনের করোনা মহামারী রোধে যিনি অন্যতম প্রধান   ভূমিকা পালন করেছেন, ড. কিং মেই হান, তার বৈজ্ঞানিক সহকর্মীদের প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ এবং তাতে উল্লেখিত ৩০টি প্রবন্ধের আলোকে প্রবন্ধটি লেখা হলো। প্রতিদিনই বিজ্ঞানীরা প্রবন্ধ প্রকাশ করবেন এবং করতে থাকবেন, কারণ এই মুহূর্তে বৈশ্বিক এই প্রধান শত্রুর বিরুদ্ধে  লড়াইএর প্রধান শক্তি বৈজ্ঞানিক জ্ঞান। এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে গেলে একে চিনতে হবে পরিপূর্ণভাবে। সেজন্যেই এই প্রয়াস। এই প্রবন্ধের জন্য লেখক ড. কিং মেই হান ও চীনসহ  পৃথিবীর সকলপ্রান্তে  যুদ্ধরত সকল নাম না জানা মহামারি প্রতিরোধকারী বীরদের প্রতি  কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।]

১। করোনা ভাইরাসের উৎস:

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে (২০ ডিসেম্বর) চীনের হুবেই প্রদেশের উ হান শহরে সার্স কো ভি ২ (কভিড ১৯) করোনা ভাইরাসটির প্রথম প্রাদুর্ভাব ধরা পড়ে। চীনের বিজ্ঞানীরা ৮ জানুয়ারী, ২০২০ সালের মধ্যে ভাইরাসটির পূর্ণাংগ ‘জিনোম সিকোয়েন্স’ করে WHO সহ গোটা পৃথিবীকে জানিয়ে দেয়। তারপর একই সংগে এই মহামারি আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি এ সম্পর্কিত গবেষণা চালিয়ে যায়। এই প্রবন্ধ লেখার সময় ১৯৬ টি দেশের ৩,৯২,১৬৯ মানুষ আক্রান্ত, মৃত্যুবরণ করেছে ১৭,১৪৬ জন, সেরে উঠেছেন ১,০৯,৮৫০ জন। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। এই করোনা ভাইরাস আবিষ্কারের আগে আরও ৬টি করোনা ভাইরাস যা মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয় তা আবিষ্কৃত হয়েছে। তারমধ্যে সার্স ( SARS, Severe Acute Respiratory Syndrome  এবং  (MERS, Middle East Respiratory Syndrome) ছিল খুবই সংক্রামক। ২০০৩ সালে চীনে ও ২০১২ সালে সৌদি আরবে শুরু হয়ে বিশ্বে  এই করোনা ভাইরাস দুটি ব্যাপক প্রাণহানি ঘটায়। বর্তমান করোনা ভাইরাসটিও ঐ দুটি করোনা ভাইরাসের মতই প্রাণঘাতী তো বটেই, বরং তার চেয়ে বেশী সংক্রামক, যা এই মুহূর্তে গোটা বিশ্ব ও মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। প্রথম এই ভাইরাসটি ধরা পড়ে চীনের উ হান শহরের হুয়ানান সামুদ্রিক মাছের পাইকারি বাজার থেকে। পূর্ণাংগ ‘জিনোম সিকোয়েন্সে’র পর ‘সাংহাই পাবলিক হেলথ ক্লিনিক্যাল সেন্টার’ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, এই ভাইরাসটির প্রকৃতিগত উৎস বাদুর। এ নিয়ে রাজনৈতিক বাদানুবাদ আছে, তবে বৈজ্ঞানিকভাবে এটা মেনে নেওয়া হয়েছে যে, এটি প্রকৃতিগতভাবে বন্যপ্রাণী থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়েছে। তবে, ‘বাদুর’ এবং মানুষের মধ্যবর্তী আরও একটি ‘অতিথি সেবক বা হোস্ট’ থাকতে পারে। মনে করা হচ্ছে এই জীবটি হলো ‘প্যাংগোলিন’ জাতীয় এক বন্য প্রাণী। এ ছাড়া আর কোন ‘অতিথি সেবক বা হোস্ট’ আছে কি না তার উপর গবেষণা চলছে।

২। করোনা ভাইরাস (COVID-19) এরজিনোম প্রকৃতি’:

২০১৯ nCoV (COVID-19) এক ধরণের বিটা ( Beta) ভাইরাস। এটি মূলত: একটা এক আঁশের (Single Stranded) ধনাত্মক প্রকৃতির (Positive Sense) RNA, যা প্রোটিন আচ্ছাদন দিয়ে ঢাকা থাকে। এটা লম্বায় ২৬ থেকে ৩২ কিলোবেস এর মত। এ পর্যন্ত জানা ভাইরাসের মধ্যে এটা সবচাইতে বড়। এই RNA জিনোমে ২৯,৮৯১ টি নিউক্লিয়োটাইড ( Nucleotide) রয়েছে। এর জিনোমিক নাম Gen Bank no. MN 9089847 । এতে ৯৮৬০ টি অ্যামাইনো এসিডের সংকেতাক্ষর লেখা থাকে। RNA সূতাটি একটি নিউক্লিওক্যাপসিড প্রোটিন দিয়ে ফলের শাঁসের মত ঢাকা থাকে। এই শাঁসের বাইরে থাকে প্রোটিনের আর একটি ঢাকনা, প্রোটিন দিয়ে তৈরী পর্দা বা ঝিল্লী ও প্রোটিন দিয়ে তৈরী ‘স্পাইক’ বা কাঁটা যা অন্য শরীরে সংক্রমনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জংগলে যেমন কাঁটাফল থাকে, যার মধ্য দিয়ে হাঁটতে গেলে কাঁটাগুলি দিয়ে ফলটি কাপড় বা শরীরে আটকে যায়, তেমনি ভাইরাসটিও এই প্রোটিনের ‘স্পাইক’ বা কাঁটাগুলি দিয়ে শরীরের মধ্যে কোষগুলির সংগে আটকে যায়। মানুষের শরীরের বিশেষ বিশেষ অংগে যেমন শ্বাসনালী, ফুসফুস,হৃদপিন্ড, কিডনি, অন্ত্র,  রক্তের শিরা প্রভৃতি স্থানে ACE2 (Angiotensin-converting enzyme 2) নামে এক ধরণের ‘এনজাইম’ থাকে। তার সংগে সংস্পর্শে এলেই ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমিত করতে পারে। শরীরের বাইরের কোথায়ও এই ‘এনজাইম’ থাকে না, ফলে নাক, মুখ, চোখ প্রভৃতি দিয়ে এই ভাইরাস ভিতরের ACE 2 এর সংস্পর্শে না এলে সংক্রমনের ভয় নেই। সেজন্য এই ভাইরাসের প্রতিরোধের জন্য এই ACE2 এনজাইমটিকে লক্ষ্য করে গবেষণা চলছে। বিশেষ উল্লেখ্য যে, রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে এই এনজাইমটির ভূমিকা রয়েছে। এটি কমে গেলে ভাইরাস সংক্রমন কমতে পারে, কিন্তু তার ফলে আবার রক্তচাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাসের বাইরের ঢাকনার এই স্তরগুলিকে E (Envelope), M(Membrane), N ( Nucleocapsid Phosphoprotein) ও S( Spike) নামে ডাকেন। এই ভাইরাসটির এস (S) জিনটির সংগে পূর্বের সার্স ভাইরাসের ‘স্পাইক’ বা এস (S) জিনের ৭৫% মিল আছে। এস (S)  জিনটির দুটি অংশ আছে  এস১ (S1)  ও এস২ (S2)। কোভিড ১৯ এর এস২ (S2) ও সার্স এর এস ২ (S2) এর মধ্যে প্রায় ৯৯% মিল রয়েছে। যার জন্য এই দুটি ভাইরাসের সংক্রমনের ধরণ প্রায় এক।  এর  ছাড়া, কোভিড ১৯ এর মধ্যে আরও ১৬ টি প্রোটিন আছে যা তার নতুন করে পূনরুজ্জীবনের সহায়তা করে।

৩। করোনার সংক্রমন বা বিস্তারের বিজ্ঞান:

‘জিনোম সিকোয়েন্সে’র মাধ্যমে এটা প্রায় নিশ্চিত যে, সকল রোগীর দেহ থেকে পাওয়া ভাইরাসগুলির প্রায় ৯৯.৯% মিল রয়েছে। তার অর্থ তারা একই উৎস থেকে এসেছে। অনেক উৎস থেকে নয়। আগেই বলা হয়েছে এই উৎসটি ‘বাদুর’ । বাদুর আর মানুষের মধ্যে আর একটি মধ্যবর্তী ‘অতিথি সেবক’ রয়েছে তাহলো ‘প্যাংগোলিন’। তাই মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমনটাই এই মহামারির প্রধান ভিত্তি। রোগবিস্তার তত্বের নিরিখে ‘কোভিড ১৯’ অত্যন্ত সংক্রামক বা ছোঁয়াচে। বাতাসে এই ভাইরাস ২ থেকে ৩ ঘন্টার মত বেঁচে থাকে, প্লাষ্টিকের উপর প্রায় ৭২ ঘন্টা, স্টেনলেইস স্টিলের উপর ৪৮ ঘন্টা, কাঠের উপর বাঁচে ২৪ ঘন্টা এবং তামার উপর ৪ ঘন্টা। সংক্রমনের পর এর বংশবিস্তার বা ‘ইনকিউবিশনের’ সময়কাল ৪ থেকে ৮ দিন। সকল বয়সের মানুষই আক্রান্ত হতে পারে। তবে, বয়স্ক মানুষ   যাদের একাধিক অসুখ রয়েছে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সংক্রমন ইত্যাদি, তাদের জন্য এটা মারাত্মক রূপ নিতে পারে। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, যে ব্যক্তি এই ভাইরাস বহন করছে, অথচ কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না তারাই সংক্রমনের সূত্র। যে সময়কালটা ভাইরাসের ‘উন্মেষপর্ব  বা অন্ডস্ফুটনকাল’, তখনই সবচাইতে বেশী  সংক্রমন হয়। ফলে, মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, শুধু রোগীর লক্ষণ প্রকাশিত হলেই সংক্রমন হবে তা নয়, বরং যাদের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশিত নয়, অথচ তারা ভাইরাস বহন করছে, তারাই সংক্রমনের জন্য বেশী ভূমিকা রাখতে পারে। এ যাবৎকালের পরীক্ষানিরিক্ষার ফলাফল অনুযায়ী শ্বাস-প্রশ্বাসের পথই ভাইরাস সংক্রমনের প্রধান পথ। এজন্য নাক ও মুখ যার সংগে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের সংযোগ রয়েছে সেটাই সংক্রমনের প্রধান পথ। মলদ্বার দিয়ে সংক্রমনের প্রমান পাওয়া যায়নি। কিন্তু, কিছু পরীক্ষায় এটা প্রমানিত যে, চোখের পর্দা দিয়ে সংক্রমন হতে পারে। এছাড়া সংক্রমিত মায়ের গর্ভে থাকা শিশুর সংক্রমন হতে পারে। ৩০ ঘন্টা বয়সের সদ্যজাত শিশুর মধ্যে সংক্রমন ধরা পড়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে সংক্রমন মাত্রা বা হার নির্ধারণ করে কত দ্রæত এই রোগ বিস্তারলাভ করবে। পরীক্ষাগারের তথ্য অনুযায়ী, কোভিড ১৯ কোরনার সংক্রমন মাত্রা ২.৬৮। সংক্রমনমাত্রা ১ এর বেশী হলেই সংক্রমন হতে পারে, এই মাত্রা অত্যন্ত বেশী। সেজন্যেই  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই ভাইরাসের সংক্রমনকে ‘অতিমারি’ বা ‘প্যা্নডেমিক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বৈশ্বিক অবস্থা তাই প্রমান করছে। শুধু চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিংগাপুরে এই মাত্রা এখন ১ এর নীচে বা কাছাকাছি।   

৪। করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য:

এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে, বিশেষ করে চীনের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, কোভিড ১৯ ও সার্স করোনার চিকিৎসা বৈশিষ্ট্যে অনেক মিল রয়েছে। রোগীর বয়সের গড় ৪৭%। প্রায় ৫৮.২% পুরুষ। গড় সংক্রমন সময় ৩ দিন। প্রধান উপসর্গ জ্বর ৮৭.৯%, ক্লান্তি ৬৯.৬%, শুকনো কাশি ৬৭.৭% এবং পেশী বা শরীরের ব্যথা ৩৪.৮%, এর সংগে প্রায় ৪৩.৮% রোগীর ডায়েরিয়া, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, বমিভাব, টনসিল ফোলা, গায়ে ফুসকুরি ওঠার মত অন্যান্য উপসর্গ দেখা গেছে। এ সকল উপসর্গ অনেকক্ষেত্রে দ্রুত তীব্র শ্বাসকষ্ট, সেপটিক শক, বিপাকীয় অম্ল  বা এসিডোসিস, রক্ত জমাট বাধায় বিলম্ব বা সমস্যা, শরীরের প্রধান ভাইটাল অর্গানগুলো একসংগে অকেজো হয়ে পড়ার মত পর্যায়ে চলে যেয়ে রোগীর মৃত্যুর আশংকা বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সি ক্রিয়ার প্রোটিনের মাত্রা বা (C Reactive Protein, CRP ) বেড়ে যেতে পারে, এ ছাড়া কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রায় ৭৬.৪% রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। বুকের সিটি স্ক্যানে উভয় ফুসফুসের সংক্রমন ধরা পড়েছে। সিটি স্ক্যানে ফুসফুসের ছবিকে ঘসা কাঁচের মত রং দেখা গেছে। প্রায় ১৭.৩৮% রোগীকে আই সি ইউ সহায়তা দিতে হয়েছে। প্রাথমিক সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল লেবরেটারি পরীক্ষা, যে রোগীর লক্ষণ দৃশ্যমান হয়নি তাদের করা হয়েছে ভাইরাল নিউক্লেয়িক এসিড পরীক্ষা, করা হয়েছে সিটি স্ক্যান পরীক্ষা। অনেক সময় এ সকল পরীক্ষা নেতিবাচক ফলাফল দিলে শ্বাসনালীর শ্লেষ্মা বা রক্তের সিরাম নিয়ে RT-PCR পরীক্ষা করে সর্বশেষ সিদ্ধান্তে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। ফলে, এই ভাইরাস সংক্রমনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক পরীক্ষা চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া এ ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া গ্রহণের ফলে অনেক দ্রæত ভালো ফলাফল পেয়েছে। পক্ষান্তরে ইতালি, স্পেন,যুক্তরাষ্ট্র,  ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী প্রথম থেকেই ধারাবাহিক পরীক্ষা পদ্ধতি না নেওয়ায় গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। এখনও পর্যন্ত দ্রæত সিদ্ধান্তমূলক সনাক্তকরণ পরীক্ষার প্রমানিত কিট প্রচলিত হয়নি। বাংলাদেশে গনস্বাস্থ্য কেন্দ্র এ ধরণের কিট আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে,এখনও তা পরীক্ষামূলক প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে। 

৫। করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য প্রতিষেধক অসুধ তার প্রয়োগ:

এই ভাইরাস প্রতিহত করার জন্য নিরন্তর পরীক্ষা নিরিক্ষা চলছে। অনেক অসুধই রয়েছে পরীক্ষাগারে প্রয়োগের স্তরে। আপদকালীন ক্ষেত্রে অনেক অসুধ প্রয়োগও করা হচ্ছে। আংশিক বা ভালো সফলতার রিপোর্টও আছে। তবে বাস্তবতা হলো বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে যেতে হচ্ছে বিরাট চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে। এখনও নির্দিষ্ট অসুধ আবিষ্কার হয়নি।

কোভিড ১৯ এক ধরণের আর এন এ (RNA) ভাইরাস, ফলে তাকে অন্যান্য আর এন এ (RNA) ভাইরাসের যেমন এইচ আই ভি (HIV) এর মত বংশবিস্তার বা পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।  সেজন্যে এইচ আই ভি (HIV) র প্রোটিজ নিরোধক কোভিড ১৯ (COVID 19) এর ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। ফলে, লোপিনাভির/রিটোনাভির এবং ইন্টারফেরন বিটা কে সমন্বয় করে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়েছে। সার্স (SARS)  ও মার্স (MERS) ভাইরাসের ক্ষেত্রে এটা সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। সেজন্য কোভিড ১৯ এর ক্ষেত্রেও এর ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া নেলফিনাভিরের মত এইচ আই ভি প্রতিষেধকও ব্যবহার করলে সুফল পাবার ধারণাও রয়েছে। Remdesivir (RDV) জাতীয় অসুধকেও সম্ভাব্য অসুধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ওয়াং এবং তার সহ গবেষকরা RDV কে গবেষণাগারে প্রয়োগের পর্যায়ে নিতে পেরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে COVID 19 ক্ষেত্রে RDV  কে প্রথম সফল প্রয়োগ এক বড় অগ্রগতি। উ হানে এটার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। ওয়াং এবং তাঁর সহ গবেষকরা ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সি-  ক্লোরোকুইনকে সফলভাবে ব্যবহার করেছে। আরবিডাল (Arbidal) শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের ক্ষেত্রে পরীক্ষাগারে প্রয়োগের স্তরে রয়েছে। করোনাভাইরাস নিউমোনিয়ার জন্য আরবিডাল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চতুর্থ পর্যায়ে আছে। এছাড়া, Monoclonal Antibody (mAb) ও  RDV এর সমন্বয় কোভিড ১৯ ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে বলে গবেষণা রিপোর্ট রয়েছে। চীনে ‘স্টেম সেল’ নিষেক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অসুধ প্রস্তুত কারখানার গবেষণাগারে চলছে বিরামহীন প্রয়াস। Gilead Science, Ascletics Pharma,   Moderna Therapeutics, CanSino Biologics, Arcturus Therapheutics,     জার্মানীর BioNTech, CureVac কানাডার Eli Lilly, GlaxoSmithKline একটি চীনা Biotech Firm এর সংগে, Inovio Pharmaceuticals চীনের সংগে, Johnson and Johnson, Pfizer, Regeneron Pharmaceuticals, Sanofi, জাপানের  Takeda, Vir Biotechnology চীনের  WuXi Biologics এর সংগে সামনের সারির গবেষণায় এগিয়ে আছে।

এই গবেষণা মানবজাতির ইতিহাসে বিরাট এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।

৬। সর্বশেষ:

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের আক্রমন গোটা বিশ্বের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রেও এক বড় ধরণের পরিবর্তনের ইংগিত করেছ। চীন কিউবা সহ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে নিজেদের আভ্যন্তরীন চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে হাত বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায়। ইতালি, স্পেন, ইরান, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে তারা চিকিৎসা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেনসহ উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলিতে টালমাটাল অবস্থা। তারা তাদের উন্নত বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান কাজে প্রয়োগে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে, বিশ্বের সকল মানুষের কাছেই আজ নতুন করে চিন্তার উদ্রেক হচ্ছে মানব সভ্যতার পথ কি? ঘোর সমাজতন্ত্রবিরোধীদের মধ্যেও নতুন করে প্রত্যাশার জন্ম হচ্ছে বাস্তবতার নিরিখে। পাশাপাশি আবার পৃথিবীব্যাপী ধর্মান্ধ দক্ষিণপন্থী শক্তিগুলি বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োগের মধ্য দিয়ে এ সংকট মোকাবিলার পরিবর্তে জনগণকে ঠেলতে চাচ্ছে ধর্মান্ধতার অন্ধকারে। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই মতাদর্শগত লড়াইএর রূপ নিচ্ছে। বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাই জয়ী হবে-অনিবার্যভাবে ভাইরাস আর ধর্মান্ধতা উভয়ের বিরুদ্ধে।


Sharing Helps!