বিজ্ঞান ও মানুষের বিজ্ঞান মনস্কতা

Sharing Helps!

সভ্যতার এই সময়কালকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ, আরও বিস্তৃত করে বললে বলা যায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞান একদিনে আজকের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বিজ্ঞানের যাত্রাপথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। পুরোনো বহু ধ্যান ধারণার বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজ্ঞানকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। তার  অনেক মর্মান্তিক ইতিহাস রয়েছে।  প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে গিয়ে মানুষকে প্রকৃতির রহস্য ভেদ করতে হয়েছে। শারীরিক ও মানসিক শ্রমের এই নিরন্তর প্রয়োগের মধ্য দিয়ে মানুষ অর্জন করেছে এই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, যা প্রতি মুহূর্তে তার মনন ও চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে। বিজ্ঞানের অর্জনের ফলে আজ মানুষ জানতে পেরেছে বস্তু জগত কি দিয়ে তৈরি, কিভাবে তৈরি। এক সময় মনে করা হতো, সব চাইতে ক্ষুদ্র বস্তুকণা হলো অনু। তারপর দেখা গেল অনুও বিভাজিত হতে পারে,  পরমাণুতে। প্রশ্ন এসে গেল, পরমাণু কি দিয়ে তৈরি। তাত্বিক আর ব্যবহারিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে দেখা গেল পরমাণুর মধ্যেও কেন্দ্র বা নিউক্লিউয়াস থাকে আর বাইরে ইলেকট্রন নামের ক্ষুদ্র কণা ঘুরে চলে। এখানেই শেষ নয়-কেন্দ্রেও থাকে প্রোটন আর নিউট্রন নামের দু’টি কণা। বিজ্ঞান এগিয়ে চলে । দেখা গেল রহস্য আরও আছে। এই কণাগুলোও আবার ‘কোয়ার্ক’ নামের আরও ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি। মানুষ এখন জানে শক্তি আর ভরের  সম্পর্ক কি। অর্থাৎ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা জগতেও যে কত বিচিত্র বিস্ময়, বলে শেষ করা যাবে না।   

আবার উল্টোদিকে এই মহাবিশ্বের রহস্য মানুষ উদ্ঘাটন করেছে অনেকটাই। এই মহাবিশ্ব কিভাবে তৈরি হয়েছে তা নিয়ে অনেক তত্ব। যেমন আছে ‘বিগ ব্যাং’ তত্ব। যেখানে বলা হয়েছে এই মহাবিশ্ব প্রথম তৈরি হয়েছে আজ থেকে প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন  বছর আগে এই মহা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। তারপর ধীরে ধীরে প্রকৃতির অমোঘ  নিয়মের মধ্য দিয়ে আজকের দৃশ্যমান জাগতিক মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে। এই বিবর্তনের ধারায় তৈরি হয়েছে গ্যালাক্সি, নক্ষত্র, সৌরজগৎ, গ্রহ এবং আমাদের পৃথিবী। আবার জড়জগতের বিবর্তনের মধ্য দিয়েই তৈরি হয়েছে প্রাণ এবং প্রাণীজগৎ। এই মহাবিশ্ব কত বড় তা অনুমান করতে হলে কিছু  বৈজ্ঞানিক তথ্য  জানা দরকার। এই মহাবিশ্বের ব্যাস হলো প্রায় ৮.৮ x ১০২৬ মিটার, ভর প্রায় ১০৫৩ কিলোগ্রাম। এই মহাবিশ্বে  জানা মতে গ্যালাক্সির সংখ্যা প্রায় ১২৫ বিলিয়ন। গ্যালাক্সি অসংখ্য নক্ষত্র বা তারার সমাহার। এক একটি তারা আমাদের সূর্যের মত, কোন কোনটা তার চেয়ে  মিলিয়ন গুন বড়।  এর মধ্যে আমরা যে গ্যালাক্সিতে বাস করি তার নাম ‘মিল্কি ওয়ে’। এক মিল্কি ওয়েতে সূর্যের মত বা তার চাইতে বড় নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় ৩০০ বিলিয়ন। তাহলে গোটা মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা গণনা করা সম্ভব। তা প্রায় ৭ x ১০২২ অর্থাৎ ৭০ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন। সত্যিই কল্পনা করাও কঠিন। তবুও এটাই বৈজ্ঞানিক সত্য।  এই বিপুল মহাবিশ্বের আমরা অতি ক্ষুদ্র জায়গায় রয়েছি। এই সত্যগুলো জানলে সাধারণভাবে মানুষের মনে বিস্ময়ের উদ্ভব হবে। অবিশ্বাস্যও মনে হতে পারে। ফলে অনেকের মনেও অতিন্দ্রিয়বাদের ধারণা আসাও বিচিত্র কিছু নয়। কিন্তু এর কোন কিছুই আজকে আর কল্পনা সর্বস্ব বিষয় নয়। পরীক্ষিত সত্য ও পরীক্ষালব্ধ সত্য। বিজ্ঞান বলে সত্য প্রবহমান। গতিশীল। সত্য অনুসন্ধান একটি চলমান প্রক্রিয়া। চরম সত্য বা শেষ সত্য এই ধারণা সঠিক নয়। এখনো বিজ্ঞানের কাছে অনেক অনুদ্ঘাটিত  রহস্য রয়েছে। তার জন্যই চলে গবেষণা, অনুসন্ধান। প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তাই বলা চলে। বিজ্ঞানের মৌল সত্যের উপর দাঁড়িয়ে প্রযুক্তি গড়ে ওঠে, যা মানুষের উৎপাদন শক্তি বা ক্ষমতা বাড়ায়। আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মত প্রযুক্তি মানুষের হাতে। প্রাণরসায়ন ও জিনপ্রযুক্তির উতকর্ষতা জীবন রহস্যের অনেক কিছুই উদ্ঘাটন করতে সক্ষম। বিশ্বসভ্যতায় এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এখন  প্রশ্ন হলো মানুষের এই জ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নতি কিভাবে প্রয়োগ হচ্ছে। মানুষের সার্বিক কল্যানে বা প্রাকৃতিক পরিবেশ এর  ভারসাম্য রক্ষায় তা কি কাজে লাগছে? বা মানুষের চেতনার গভীরে এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কতটা কাজে লাগছে?  আজকের আলোচনায় সেটাই বিবেচ্য বিষয়।  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের সাধারণ ধারণার সঙ্গে কখনো মেলে,  কখনো মেলে না। তখন কি করণীয়? তখন কি বিজ্ঞান বা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে ত্যাগ করতে হবে, বিজ্ঞান মনস্কতাকে ত্যাগ করে ভাববাদী বা অবৈজ্ঞানিক চিন্তাকে গ্রহণ করতে হবে?  নাকি, মানুষের চেতনার স্তরকে বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞান লব্ধ জ্ঞানকেই মানুষের মধ্যে নিতে হবে। প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে, মানুষের পুরনো বিশ্বাসকে পুঁজি করে স্বার্ধান্ধ কিছু মানুষ বিজ্ঞানের জ্ঞান ও চেতনাবিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত। এই প্রসঙ্গে করোনা অক্রান্ত সাম্প্রতিক বিশ্বের উদাহরণ সামনে আনা যায়।  

 (২)

মানব সভ্যতা এই মুহূর্তে কোভিট-১৯ বা করোনা নামক এক ভাইরাসসৃষ্ট ব্যাধিতে আক্রান্ত। বৈশ্বিক এই প্যানডেমিক মানুষের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, সামাজিক জীবন সকল কিছুতেই এক ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করেছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মানুষকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। হতেই হবে। বিজ্ঞানীরা তাঁদের নিরন্তর চেষ্টায় ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন।  আরও গবেষণা চলছে। মানুষের মধ্যে যে কোন রোগ সম্পর্কে সাধারণ বৈজ্ঞানিক ধারণা রোগ বিস্তার প্রতিরোধের জন্য অন্যতম  প্রধান হাতিয়ার। শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষই সব কিছুর নিয়ামক ও নির্ধারক হয়ে ওঠে। মানুষ বিভ্রান্ত থাকলে কোন কাজই সঠিকভাবে করে ওঠা যায় না। আমরা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে শুরু করতে পারি। বৈজ্ঞানিকভাবে জানা তথ্য অনুযায়ী করোনা প্রতিরোধের প্রধান অস্ত্র যা  ছিল বা আছে তাহলো, যারা আক্রান্ত তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। একটি সহজ ও সাধারণ সত্য। কারণ আমাদের কাছে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত বিজ্ঞানসম্মত যে তথ্য আছে,  তার ভিত্তিতে এটা স্পষ্ট, এই ভাইরাস এতটাই সংক্রামক যে সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে আক্রান্ত হওয়া  থেকে মুক্ত থাকা প্রায় অসম্ভব। এই সহজ বৈজ্ঞানিক সত্যটা সবার কাছে পরিষ্কার জানা থাকলে, সকল মানুষ নিজের ইচ্ছেয় তার কি করা উচিত,  তা নির্দিষ্ট করে নিতে পারেন। কিন্তু আমরা দেখলাম, এই সহজ বৈজ্ঞানিক তথ্যটি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ধারণা পরিষ্কার না থাকায়, ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা সর্বত্রই সাধারণ মানুষ এমন ব্যবহার করেছেন,  যার ফলে সংক্রমন দ্রুত বেড়ে গেছে।  ইউরোপ, আমেরিকার মানুষেরা এমন জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত যে, নিজের কর্মক্ষেত্র বাদেও তাঁরা পণ্য বিপণীকেন্দ্র, পাব, বার, ক্লাব, পার্ক, বীচ সর্বত্র যেতে অভ্যস্ত। এটা তাদের জীবনের অংশ। যখন করোনা ভাইরাস তাঁদের দৈনন্দিন অভ্যস্ত জীবনের বিরুদ্ধে হানা দিল, তাঁরা  আজব ব্যবহার শুরু করলেন। অতি শিক্ষিত ব্যক্তিরাও অতি প্রচলিত এবং কথিত ‘সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং’ বা দূরে থাকার পদ্ধতিটাকে মেনে নিতে  পারলেন না। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী তিনি নিজেও এর অন্তর্নিহিত অর্থটাকে আমল না দিয়ে, করোনা আক্রান্ত রোগির সংগে হাত মেলালেন, এবং তা প্রকাশ্যে মিডিয়াতে বলে দিলেন। এই বোধের অভাবেই সাধারণ মানুষও সরকারের সিদ্ধান্তটাকে বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মনে করে কেউ মানলেন, কেউ গোপনে ভাঙলেন। আমেরিকার সম্প্রতি সাবেক হওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো এমন ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন যে ভাবাই যায় না আমেরিকার মত জ্ঞানে  বিজ্ঞানে অগ্রসর একটি দেশের প্রেসিডেন্ট এতটা অবৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণার  মানুষ হতে পারে। পৃথিবীর অন্যন্য বিজ্ঞানীদের কথা বাদ দিলাম, সে দেশেরই  বিখ্যাত বিজ্ঞানী ফাঊসির মতকেও সে অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে উপেক্ষা করেছে। যার ফলে আমেরিকাকে এখন খেসারত দিতে হচ্ছে।  গোটা ইউরোপ,  আমেরিকা যেখানে শিক্ষার হার শতভাগ, সেখানেও মানুষ এই সহজ শিক্ষাটাকে আত্মস্থ করতে ব্যর্থ হলেন। পরিণতি ভয়াবহ হলো।

যদি এশিয়ার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, এশিয়ার মানুষ ধর্মপ্রাণ,  ধর্মভীরু, অনেকক্ষেত্রে ধর্মান্ধও আছেন। এখানে সকল ধর্মের কতকগুলো দৈনন্দিন আচার আচরণ আছে। সেগুলোকে তাঁরা মন থেকে গভীরভাবে জীবনের অংশ হিসেবে নেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমন তাঁদের সেই আচার ব্যবহারে আঘাত  করলো। তাঁরা বিচিত্র ব্যবহার শুরু করলেন। অনেকে আবার সুযোগ বুঝে তাকে উসকেও দিলেন। এটা আজ পৃথিবীর সকলেরই জানা যে, দক্ষিণ কোরিয়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যে দেশগূলো সফল হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রথম সারির একটি দেশ। সেখানেও একজন মহিলা গির্জায় যাবার ফলে তিনি ‘superspeader’ বা ‘অতিসংক্রমনকারি’ তে রূপান্তরিত হয়েছেন। ফলে দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্রুততার সংগে করোনা বিস্তার লাভ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে ( বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ) সকল ধর্মের মানুষরাই তাঁদের ধর্মীয় স্থানে ভীড় করেছেন। এখানে সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে ধর্মীয় আচার পালনে  তাঁরা শুধু অভ্যস্ত নন, করণীয় হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এটা তাঁরা তাঁদের জীবনাচরণের অংশ মনে করেন। সেখানে করোনার উপস্থিতি তাঁদের বিশ্বাসের উপর আঘাত দিয়েছে। কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে লড়াইএ বিজ্ঞান যখন বলছে, এটা করা যাবে না, এটা বিজ্ঞানসম্মত না, তখন তাঁরা সরাসরি বিজ্ঞানকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন। এমনকি ধর্মীয় গ্রন্থে এই ধরণের মহামারিতে যে  কাজগুলো করতে বলা হয়েছে, করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেগুলোও তাঁরা স্মরণে আনতে পারছেন না। আগেই বলেছি, অনেকে বিভিন্ন উছিলায় মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পেরেছে, বিজ্ঞানসম্মত কাজটা না করতে। তার ফলাফল কতটা তা বুঝতে সময় লেগেছে, কিন্তু ইতিমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।

আবার দক্ষিণ এশিয়ায় দারিদ্র, ক্ষুধা একটি অন্তরায়। ক্ষিদে থাকলে কোনও জ্ঞানই কাজে দেয়না।  ফলে এ অঞ্চলের মানুষ ক্ষিদের জ্বালাতেও বৈজ্ঞানিক এই সত্যটাকে মেনে চলতে পারেননি। এই সত্যটাকে বিবেচনা না করে তো তার সামনে সত্যের সবক দিলে তার কাছে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।   

আমাদের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় আচরণে একটা বড় সমস্যা হলো আমরা জনগণের আস্থাটাকে গৌণ করে  অনেক সময় উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখি। জোর করে চাপিয়ে দিয়ে কোন কাজ করাটাকেই আমাদের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় আচরণে প্রধান দিক হয়ে ওঠে।

আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি আমাদের সমাজে ইতিবাচক মনোভাব নেই। কেন নেই তার বিশ্লেষণ অন্যত্র হতে  পারে। কিন্তু বাস্তবে এটাই সত্য। আগেই বলেছি একে বলে ‘ general perception’ বা সাধারণ ধারণা। এটা সামাজিক এমনকি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।  কিন্তু, তার অর্থ কি এই যে, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মিদের ছাড়া দেশ চলছে বা চলবে? তাঁরা তো একটি সভ্য সমাজের অপরিহার্য্য  ও অতি প্রয়োজনীয়  অংশ। হাজার হাজার বছরের চেষ্টায় রোগ ব্যাধি, জরা থেকে বাঁচার জন্য মানুষের নিরলস চেষ্টায় গড়ে উঠেছে এই স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা যতটা পাকাপোক্ত এবং জনমানুষের কাছাকাছি থাকবে ততটাই জীবন সহজ ও সুস্থ হয়ে উঠবে। করোনা মহামারি এটাকে আরো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ডাক্তার নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী তাঁরা পেশাদার ব্যবসায়ী নন। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ কিউবা  ভিয়েতনাম চীনসহ সমাজতন্ত্রমুখী দেশের  ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। এটা শুধু তাদের ব্যক্তি মানুষগুলোর বিরাটত্ব নয়। বরং  যে নীতি বা পদ্ধতি তাদের গড়ে তুলেছে, এটা সেই সমাজব্যবস্থার দান। এটা এখন কিউবার মানুষের জীবনবোধের অংশ। তাই চেতনাকে  তাঁরা  অনুসরণ করেন, ধারণ করেন  অবলীলায়। বোধহয় তাই তা  করতেই হবে আগামী সভ্যতাকেও। নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে।  বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাধারণ ধারণা যতটা  সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিস্কারভাবে যাবে, বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে মানুষের বাস্তব প্রয়োজনটাও দৃশ্যমানভাবে মেটানো যাবে, বিজ্ঞানকে দূরের বস্তু নয়, জীবনাচরণের অংশ হিসেবে প্রস্তুত করা যাবে, মানুষ ততটাই  বিজ্ঞানকে ধারণ করে যে কোন অশুভ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে নিজেকে দাঁড় করাতে পারবে শক্তভাবে।  

মানুষ, মানুষ এবং মানুষই সভ্যতার শেষ কথা। মানুষ যতটা বিজ্ঞানমনস্ক হবে, ততটাই মানুষ তার জীবন, বিশ্বাস ও সামাজিক আচরণে যুক্তিসিদ্ধ হয়ে উঠবে। মানুষ ততটাই পারিপার্শ্বিক প্রকৃতিকে ও পরিবেশকে  রক্ষা করবে। তাই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান মনস্কতাকে যেমন ভিত্তি করতে হবে তেমনি  বিজ্ঞানমনস্কতাকেও ধৈর্যধরে মানুষের চিরাচরিত বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করতে শিখতে হবে। একটানে বিজ্ঞানকে তার বিপরীতে ও বিরুদ্ধে দাঁড় করালে বিজ্ঞানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষও তাকে গ্রহণ করতে চাইবে না। এটা মনে রাখতে হবে, মানুষ যখন বিজ্ঞানকে নিজস্ব চেতনা দিয়ে গ্রহণ করে, তখন বিজ্ঞানও সমৃদ্ধ হয়, মানুষও সমৃদ্ধ হয়। তখন সভ্যতা এগিয়ে চলে। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।  


Sharing Helps!