ভেনিজুয়েলার সংকট কি ও কেন

Sharing Helps!

১৯৭৩ সালে চিলির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আলেন্দে সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক ক্যু দে তা ও তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে রক্তাক্ত ঘটনার জন্ম হয়েছিল, তাতে বিশ্বের সকল মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছিল লাতিন আমেরিকার দিকে। এরপরও অনেক ঘটনা ঘটেছে লাতিন আমেরিকায়। কিন্তু, সম্প্রতি ভেনিজুয়েলায় উদ্ভুত রাজনৈতিক সংকট নতুন করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি লাতিন আমেরিকার দিকে নিবদ্ধ করেছে। প্রকৃত অর্থে, ভেনিজুয়েলার সংকট নিয়ে গোটা বিশ্ব আজ মোটা দাগে দু’ভাগে বিভক্ত। এত দ্রুততার সংগে বৈশ্বিক এই মেরুকরণও অত্যন্ত অর্থবহ। গত ১০ জানুয়ারি, ২০১৯ ভেনিজুয়েলার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, দ্বিতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। প্রায় সংগে সংগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার কিছু মিত্রদেশ ’নির্বাচন সুষ্ঠ’ হয় নি এই অজুহাতে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর ক্ষমতা গ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং দৃশ্যত: ভেনিজুয়েলায় রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়। ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ভেনিজুয়েলার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা হুয়ান গুয়াইদো ভেনিজুয়েলার সংবিধানের ২৩৩ ও ৩৩৩ ধারা মোতাবেক অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে, এই ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং লাতিন আমেরিকার লিমা গ্রুপের ১৪ দেশের মধ্যে ১১ টি দেশের দক্ষিণপন্থী ও রক্ষণশীল সরকার হুয়ান গুয়াইদো সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের অধিকাংশ সদস্য দেশ গুয়াইদোকে সমর্থন দেয় এবং পরবর্তী ৮ দিনের মধ্যে স্বীকৃতিও দেয়। শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানী পিডিভিএস এর উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যুক্তরাজ্যের ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে রাখা ভেনিজুয়েলার ১ বিলিয়ন পাউন্ডের সোনা, ঐ ব্যাংক বেআইনীভাবে ’ফ্রিজ’ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর লক্ষ্য যে ভেনিজুয়েলার নির্বাচিত মাদুরো সরকারকে উৎখাত করা, এটা স্পষ্টত:ই বোঝা যায়। তারা পূর্বকল্পিতভাবেই নেমেছে। ভেনিজুয়েলা সংকটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পদক্ষেপ সম্পর্কে ওয়াশিংটনের Centre for Economic and Policz Research এর একজন গবেষক মার্কস ওয়েসব্রট লিখেছেন, “This was a planned thing. It was a coordinated effort with the US and its coalition of the willing among Latin American Countries. Thez used date of Madur’s inauguration to claim that his presidencz was illegitimate.” এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার মিত্রদের দ্বারা সৃষ্ট ভেনিজুয়েলার এই সংকটে মাদুরোর পাশে দাঁড়িয়েছে নির্বাচিত মাদুরো সরকারের দীর্ঘদিনের বন্ধুদেশ রাশিয়া, চীন, কিউবা, বলিভিয়া, নিকারাগুয়া, মেক্সিকো, বেলারুশ, ইরান, সিরিয়া, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা। অনেক দেশ এখনও প্রকাশ্য অবস্থান নেয় নি। আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে, বিরোধীদের শত উস্কানি সত্বেও ভেনিজুয়েলার শ্রমজীবি ও গরীব মানুষ, ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মাদুরোর সমর্থন দিচ্ছে ও পাশে রয়েছে।

তথাকথিত মুক্ত দুনিয়ার দেশগুলো একযোগে ক্ষেপে উঠার কারণ কি? এর উত্তর খুঁজতে গেলে ভেনিজুয়েলার প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে একটু খুঁটিয়ে দেখতে হবে। ভেনিজুয়েলা লাতিন আমেরিকার উত্তর প্রান্তে আটলান্টিকের প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ। আয়তন ৩,৫৩,৮৪১ বর্গমাইল। জনসংখ্যা প্রায় ৩,১৫,৬৮,১৭৯ জন। এর ৫১.৬% মেজটিজো বা মিশ্র জনগোষ্ঠি, ৪৩.৬% ইউরোপীয়ান শ্বেতাঙ্গ, ৩.৬% আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ, ১.২% অন্যান্য। ৭১% ক্যাথলিক, ১৭% প্রটেষ্টান্ট, বাকিরা অন্য ধর্মালম্বী। দেশে ২৬ টি ভাষা রয়েছে। প্রায় ৯৭% শিক্ষিত। ২০১৮ সালে ভেনিজুয়েলার জিডিপি ৩২০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু আয় ১১,০৬৬ ডলার। দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশটিতে আছে সোনা, নিকেল, লোহা, ইস্পাত, হীরা, এ্যালুমিনিয়াম, কয়লা, এ্যাসফল্ট, প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল। তেলের মজুত পৃথিবীর বৃহত্তম -২৯৭ বিলিয়ন ব্যারেল। কয়লা ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন টন, লাতিন আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম। সোনা মজুত ১০,০০০ টন, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম। লোহা ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন টন। প্রাকৃতিক গ্যাস ৫ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার যা পশ্চিম গোলার্ধের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এছাড়া রয়েছে বিশাল বিস্তৃত বনভূমি যা সমগ্র দেশের অর্ধেক, ব্রাজিলের পরই যার স্থান। প্রাসঙ্গিকভাবে প্রশ্ন আসে, এই প্রাকৃতিক সম্পদের সঙ্গে বৈদেশিক শক্তির সম্পর্ক কোথায়? দেশটির রাজনীতি-অর্থনীতির ইতিহাসের মধ্যেই তা নিহিত। এমন প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশটির রাজনীতির ইতিহাসও বিচিত্র। ভেনিজুয়েলা ১৫২২ সাল থেকে ছিল স্পেনের উপনিবেশ। ১৮১০ সালে জেনারেল সাইমন বলিভারের নেতৃত্বে ভেনিজুয়েলা স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং দীর্ঘ উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে ১৮৩০ সালে পরিপূর্ণভাবে স্বাধীন হয়। উনবিংশ শতাব্দি ও বিংশ শতাব্দির ৫০ এর দশক পর্যন্ত গোটা লাতিন আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের নানা শোষণের প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভেনিজুয়েলার রাজনীতি ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। গোটা সময়টাতেই এদেশ স্থানীয় সামরিক নেতৃত্ব দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়। ১৯৫৮ সালে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে। এ সময়টাতে অর্থনীতিতে দেশ অনেক এগিয়ে যায়। এই সময় ভেনিজুয়েলার জিডিপি, জার্মানীর জিডিপি কে ছাড়িয়ে যায়। এর পরই শুরু হয় বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদের নয়া ঔপনিবেশিক নীতি যা ভেনিজুয়েলার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। যার ফলে, লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের মত ভেনিজুয়েলাতেও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকে। ’৮০ দশকের গোটা সময়টায় দেশের মধ্যে আই এম এফ, বিশ্বব্যাংক ও সাম্রাজ্যবাদের নয়া উদারনীতিক অর্থনীতির কৌশলের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে ব্যাপক গণবিক্ষোভ। এই সময়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে দু’টি মন্তব্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মন্তব্য দু’টি হলো, `IMF is a neutron bomb that killed people but left buildings standing’s Avi’ `Policz of World Bank is genocide of workers in the paz of economic totalitarianism’ রাজনৈতিক এই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে ১৯৮৯ সালের কারাকাস দাঙ্গা, ১৯৯২ সালের ব্যর্থ অভ্যূত্থান, ১৯৯৩ সালে প্রেসিডেন্ট কার্লোস অ্যাড্রিস পেরেজ এর অভিশংসন এবং ১৯৯৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ’৯২ এর অভ্যূত্থানের নেতা হুগো শ্যাভেজের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ভেনিজুয়লার রাজনীতিতে শুরু হয় নতুন পর্যায়। ১৯৯৯ সালে নতুন ’জাতীয় নির্বাচক পরিষদ’ বা ‘National Constituent Assemblz’ গঠিত হবার মধ্য দিয় ’বিপ্লব’ শুরু হয়। ভেনিজুয়েলার নতুন নাম হয় ‘Bolivarian Republic of Venezuela’। হুগো শ্যাভেজ শুরু করেন তাঁর ’জনবান্ধব সামাজিক কল্যাণ’ কর্মসূচী। তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনীতিক সংস্কারে হাত দেন। তিনি তেল, সোনাসহ খনিজ সম্পদ উৎপাদন ও রফতানির উপর বৈদেশিক নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করেন ও রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। ওপেক এর উপর প্রভাব বিস্তার, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক এর নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব খনিজ সম্পদের উপর নির্ভর করে জাতীয় অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিকভাবে চীন, কিউবা, রাশিয়াসহ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বলয় গড়ে তোলার প্রয়াস চালান ও সফলও হন। সাম্রাজ্যবাদের নয়া উদারনীতিবাদিক অর্থনীতির বিরুদ্ধে ’একবিংশ শতাব্দির সমাজতন্ত্রে’র শ্লোগান তোলেন। একবিংশ শতাব্দির ১ম দশকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লাতিন আমেরিকার প্রায় প্রতিটি দেশে বামপন্থী সরকার নির্বাচিত হয় অথবা বামপন্থীদের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। ভেনিজুয়েলার তেল উৎপাদনের উপর ছিল মার্কিন তেল কোম্পানীগুলোর আধিপত্য, সোনার খনির উপর ছিল কানাডা কোম্পানীগুলোর এবং কয়লাখনিতে ছিল অষ্ট্রেলিয়ার বহুজাতিক কোম্পানীগুলো। অর্থাৎ হুগো শ্যাভেজের সকল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পদক্ষেপ আসলে একযোগে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের সকল বহুজাতিক অংশীদারদের স্বার্থে আঘাত করেছে, এতে কোন সন্দেহ নাই।
ভেনিজুয়েলার সংকট সৃষ্টি আসলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বরণনৈতিক কৌশলের অংশ। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে মার্কিন সাম্যাজ্যবাদ তার বিশ্ব রণনীতি নতুন করে ঢেলে সাজায়। তাদের আফ্রো-মধ্যপ্রাচ্য নীতির শিকার হয়েছে ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়াসহ গোটা এলাকা। তার রক্তাক্ত ইতিহাস এখানে উল্লেখের প্রয়োজন নাই। ’৮০ দশক থেকে চীনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার প্রশান্ত মহাসাগরীয় রণনীতি পূনর্বিন্যাস করে। চীনকে ঘিরে তার সামরিক, বেসামরিক, অর্থনৈতিক সকল কর্মকৌশল তৈরি হয়। উত্তর কোরিয়াকে কেন্দ্র করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এশীয়-প্রশান্ত অঞ্চলকে এক যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল তাও সবার জানা। একবিংশ শতাব্দির ১ম দশকে লাতিন আমেরিকা জুড়ে ’পিংক বিপ্লব’ এ এলাকার সাম্রাজ্যবাদের বৈশ্বিক স্বার্থকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাজার চেষ্টা করেও কিউবার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে পারে নি। ভেনিজুয়েলায় হুগো শ্যাভেজের ক্ষমতায় আসাটা ছিল ’গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত’ । ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকার উপর আলাদা দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। নানা কৌশলে বামপন্থী সরকারগুলোর স্থলে দক্ষিণপন্থী অথবা রক্ষণশীল শক্তিকে ধীরে ধীরে ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয়। ব্রাজিলের বামপন্থী প্রেসিডেন্ট ডিলমা রুসেফ সরকারকে ’সিভিল ক্যু’ এর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখে, তাকে কারারুদ্ধ রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হলো না, তখন ’মুক্ত’ দুনিয়ার কেউ তাকে অগণতান্ত্রিক অভিহিত করে নি। ব্রাজিলের ক্ষমতায় এখন চরম দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট জেয়ার বোলসোনারো। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের মৃত্যু ও নিকোলাস মাদুরোর ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সকল মিত্ররা লাতিন আমেরিকার ‘শেষ ঘাঁটি’ ভেনিজুয়েলা থেকে প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার সকল উদ্যোগ নেয়। আজকের ভেনিজুয়েলার সংকট সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার মিত্রদের ষড়যন্ত্রে এবং এটা তাদের বৈশ্বিক রণনীতির অংশ হিসেবেই। এটি কোনভাবেই ভেনিজুয়েলার আভ্যন্তরীন সংকট নয়।

শেষ কথা হলো,পশ্চিমা গণমাধ্যমে একটি কথা বেরিয়েছে যে, ’ভেনিজুয়েলার সংকট হলো মুক্ত বিশ্বের সঙ্গে একনায়কত্বের লড়াই’। কথাটাকে সঠিকভাবে বললে বলতে হয়, আসলে ভেনিজুয়েলার লড়াই হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদের নয়া উদারনীতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতিক স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই। বিশ্বের দেশে দেশে এ লড়াই নানাভাবেই চলছে। এখন তা কেন্দ্রীভূত হয়েছে ভেনিজুয়লায়। বাংলাদেশেও প্রায়শই যখন দেখি, গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের নামে কূটনৈতিক শিষ্টাচার অগ্রাহ্য করে বাইরের প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ হয়, ’নির্বাচন’ অগ্রহণ যোগ্য হয়েছে অজুহাত তুলে ভেনিজুয়েলার ঝড় এখানেও আসতে পারে না, সে নিশ্চয়তা কে দিতে পারে? আর তখন সেই ঝড় রুখতে গেলে জনগণেরই স্মরণাপন্ন হতে হবে, জনগণকেই আস্থায় নিতে হবে। জনগণ পাশে আছে জেনেও কোনো অজুহাতেই জনগণকে উপেক্ষা করে, অন্য কোনো উপায় দেখলে তার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। এ বড় নগ্ন সত্য। সাম্রাজ্যবাদের সেই পুরনো রূপের নতুন চেহারার কৌশলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ওঠার বিকল্প নাই। তাই প্রয়োজন আজ বিংশ শতাব্দির সংগ্রামের ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনা। ভেনিজুয়েলার জনগণের লড়াই এর পক্ষে বিশ্বব্যাপী সংহতির ডাক উঠুক-এটাই কাম্য। কে জিতবে, তা ইতিহাস নির্ধারিত।


Sharing Helps!